তুমি স্বপ্নে রাজা হতে পার, কোটি কোটি টাকা, বাড়ি-গাড়ির মালিক হতে পার। কল্পলোকের সুন্দর গল্পও হতে পার,কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন এক জগৎ। এখানে বড় হতে হলে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। শিক্ষার দ্বারা নিজের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করে সঠিক কর্মানুশীলনের মাধ্যমে বড় হতে হবে। সুতরাং কল্পনার জগতে হাবু-ডুবু না খেয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করাই মনুষ্যত্বের পরিচায়ক।
আরিফ টেক্সি ক্যাব চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। একবার একজন আরোহীকে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে সে বিশ্রাম নিচ্ছিল। সহসা গাড়ির ভিতরে দৃষ্টি পড়তে সে দেখতে পেল একটি মানিব্যাগ সিটের ওপর পড়ে আছে। ব্যাগে অনেকগুলো ডলার। কিন্তু ব্যাগে কেনো ঠিকানা পাওয়া গেল না। সে সন্ধ্যা অবধি অপেক্ষা করল। নিরুপায় হয়ে সে পত্রিকা অফিসে গিয়ে সম্পাদককে একটি বিজ্ঞপ্তি ছাপিয়ে দেবার অনুরোধ জানায়।
সন্ধ্যায় দেখা গেল, নিজেদের ছাগলের সাথে অতিরিক্ত একটি ছাগলও আথালে ঢুকছে। এশার নামাজ পার হয়ে গেল, কিন্তু কেউ খোঁজ নিতে এল না। দাদু বললেন, না, না, চুপ করে থাকা ঠিক হবে না এক কাজ কর, রফিক-শফিক বেরিয়ে পড়। প্রতিবেশী নাবিল আর তালিমকে সাথে নিয়ে দুজন দুদিকে যেও। মসজিদ থেকে চোঙ্গা নিয়ে গাঁয়ে ঘোষণা দিয়ে আস। কিছুক্ষণের মধ্যে দু-ভাই দাদুর পরামর্শ মতো বলতে লাগল, ভাইসব, একটি ছাগল পাওয়া গেছে। যাদের ছাগল তারা দয়া করে মতিন শিকদারের বাড়ি থেকে নিয়ে যান ।
রফিক সাহেব শীতের ছুটিতে ভাগ্নি সাহানাকে নিয়ে গ্রামে বেড়াতে যান। রাতের আকাশ দেখার জন্য তারা খোলা মাঠে যান। অদূরেই দেখতে পান মাঠের মধ্যে হঠাৎ এক প্রকার আলো জ্বলে উঠে তা সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। ওটা কিসের আলো তা জানতে চাইলে সাহানার মামা বলেন, ভূতের! সাহানা ভয় পেয়ে তার মামাকে জড়িয়ে ধরে। মামা তখন তাকে বুঝিয়ে বলেন যে, খোলা মাঠের মাটিতে এক প্রকার গ্যাস থাকে- যা বাতাসের সংস্পর্শে এলে জ্বলে ওঠে। সাহানা বিষয়টা বুঝতে পেরে স্বাভাবিক হয় ।
অহিংসার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় গণতন্ত্র যেখানে সবারই সমান স্বাধীনতা থাকে। যেখানে প্রত্যেকেই হবে তার জগৎ-নিয়ন্তা। এটাই সেই গণতন্ত্র যাতে আপনাদের আজ অংশগ্রহণ করতে আহ্বান জানাচ্ছি। একদিন আপনারা বুঝতে পারবেন, হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে পার্থক্য ভুলে যাওয়া এবং আপনারা আপনাদের শুধু মানুষ মনে করবেন, এবং সবাই একত্র হয়ে স্বাধীনতার আন্দোলনে ব্রতী হবেন।
দাড়িয়াপুর গ্রামের রহিমা দরিদ্র হলেও শিল্পী মনের অধিকারী। ছোটবেলা থেকেই সে বাঁশ ও বেত দিয়ে সংসারের প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস তৈরি করত। কিন্তু আচমকা একদিন তার স্বামী মারা গেলে দুই সন্তান নিয়ে সে পথে বসে। রহিমা উপায়ান্তর না দেখে অবশেষে সুঁই-সুতা হাতে তুলে নেয়। সে তার সুখ-দুঃখের জীবনালেখ্য দীঘল সুতার টানে ভাষা দিতে থাকে। একদিন বেসরকারি একটি সংস্থার মাধ্যমে তার সুচিশিল্পগুলো বিদেশে যায় এবং মোটা অঙ্কের অর্থ প্রাপ্তির পাশাপাশি সে প্রচুর সুনাম অর্জন করে ।
সেঁজুতির স্কুলে বার্ষিক লোকশিল্প মেলা চলছিল। সে মেলায় মাটির তৈরি একাধিক পুতুল জমা দেয়। সেগুলো একটি গ্রামীণ পরিবারকে প্রতিনিধিত্ব করে। দর্শনার্থী, বিচারক এবং প্রতিযোগী সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখেন এটি। একজন মন্তব্য লেখেন, আমাদের লোকশিল্প যে সমৃদ্ধ তা বলে শেষ করার মতো নয়। কিন্তু সময় ও রুচির পরিবর্তনে তা আজ প্রায় ধ্বংসোন্মুখ। আমাদের সকলের এখনই এর প্রতি নজর দেওয়া উচিত। নইলে অচিরেই এ শিল্প ধারাকে আমরা হারাব।
উদ্দীপক দুটি পড়ে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নসমূহের উত্তর দাও :
জোবেদ আলী ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য। এই নিয়ে টানা পঞ্চম বারের মত তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হলেন। হবেনই বা না কেন ? এলাকার মানুষের অসুখ-বিসুখ হলে সুস্থ না হওয়া অবধি তিনি তার শয্যা ছাড়েন না। সমস্যায় পড়লে সমাধান নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তার মুখে অন্ন রোচে না। সেই তার অসুখ হলে গাঁয়ের লোক ভেঙে পড়ল। চোখের পানিতে বুক ভাসিয়ে প্রার্থনা করল—আল্লাহ, তুমি আমাদের জোবেদ ভাইকে সুস্থ করে দাও।
সেলিম সাহেব নানা উপায়ে নানা পন্থায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। নদীর পাড় ভেঙ্গে পড়ার মতো ইদানিং বিভিন্ন অজুহাতে সে পাহাড়ের বিরাট বিরাট অংশ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। রাতে দুশ্চিন্তায় ঘুম হয় না। তার মনে হচ্ছে যাকে তিনি এক সময় সুখের উৎস ভেবে ছিলেন তাই হয়ে উঠেছে এখন অসুখের মূল কারণ। ভাঙ্গন যেভাবে লেগেছে তাতে বোঝা যাচ্ছে পাপের ধন প্রায়শ্চিত্তেই যাবে।
মেহেরুন্নেসা এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। নবীনবরণ অনুষ্ঠানে নাট্যাভিনয় দেখে তিনি বান্ধবীদের সাথে ক্যাম্পাস ঘুরতে ঘুরতে এলেন কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে। সেখানে দেখেন—এক হাতে বন্দুক ধরে এক পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বিশালাকার এক ভাস্কর্য। নাম—সংশপ্তক। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও যে যুদ্ধ চালিয়ে যায় তাকেই বলে সংশপ্তক । ৭১-এর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কথা স্মরণ করে এই ভাস্কর্যটি বানানো হয়েছে। মনটা ভরে গেল মেহেরুন্নেসার ।
নন্দলাল বসু তাঁর “শিল্পকলা' গ্রন্থে বলেছেন- 'যে সৃষ্টির মধ্যে মানুষের প্রয়োজন সাধন অপেক্ষা অহেতুক আনন্দ বেশি, যাহাতে মানুষের জৈব অপেক্ষা আত্মিক ও মানসিক আনন্দ সৃষ্টি বেশি, তাহাকে আমরা ললিতকলা বলিয়া আখ্যায়িত করিতে পারি। আবার যাহাকে আমরা ললিতকলা বলি, তাহাও আরেক দিক হইতে কারুকলা শ্রেণিভুক্ত হইতে পারে। স্থাপত্যবিদ্যাপ্রসূত সুরম্য প্রাসাদকে যখন মানুষের বসবাস উপযোগী করিয়া দেখি তখন তাহা কারুশিল্প। আবার উহাকে যখন রূপময় অসীম সৌন্দর্য সৃষ্টি হিসেবে দেখি তখন তাহা চারুকলা।'
উদ্দীপক—১ : নারকেল শ্রীলংকানদের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। নারকেল তেল ছাড়া তারা কোনো খাবার রান্না করে না। কারিতে নারকেল তেল ছাড়াও গুঁড়া শুঁটকি মাছ ব্যবহার করা হয়। এই গুঁড়া শুঁটকিকে তারা মসলার অংশ হিসেবে দেখে। এরা রান্নায় প্রচুর মসলা এবং লাল মরিচ ব্যবহার করে।
উদ্দীপক—২ : শ্রীলংকার রাস্তায় যেসব তরুণী চলাচল করে তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ অতি সাধারণ। দামি পোশাক ও সাজগোজের দিকে তাদের যথেষ্ট আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না। স্পষ্টতই মনে হয়, এরা জীবন-যাপনে সহজ-সুন্দর এবং এতেই তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
সীমা ও চৈতি দুই বান্ধবী। আজ তাদের খুব আনন্দের দিন, কারণ আজ নববর্ষ। তারা দুইজনে লাল পাড় সাদা শাড়ি পড়ে চলে যায় রমনার বটমূলে। সেখানে কত মানুষের ভিড়। ছেলে, মেয়ে, শিশু, বুড়ো, সবাই সেজেছে নতুন সাজে। সেখানে সীমার খালাতো বোন তন্বীর সাথে দেখা। সীমা খালা- খালু সবার খোঁজ পেল তন্বীর কাছ থেকে। ছোট খালাতো বোনের জন্য কিনে দিল নানান খেলনা। নিজের বাড়ির জন্য কিনে নিল কলা, ঝুড়ি, হাড়ি, পাতিল ইত্যাদি। চৈতি মনের আনন্দে গেয়ে উঠল :
তাপস নিশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক ৷
মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।
ইফতি পিয়া অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। একদিন বাংলা ব্যাকরণে ভাষার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পড়ার সময় দুটো বৈশিষ্ট্যের দিকে ওর নজর আটকে গেল। বৈশিষ্ট্য দুটি হলো—
(১) ভাষা যত কঠিন শব্দ দিয়েই শুরু হোক না কেন, ক্রমান্বয়ে ব্যবহারের ফলে তা সহজ ও সরল হয়ে ওঠে। যেমন-চক্র > চক্ক > চাকা, চর্মকার > চম্মআর > চামার, হস্ত > হখ > হাত ইত্যাদি। একসময় এরকম সরলীকরণ হতে হতে একটি নতুন ভাষারই উদ্ভব হয়।
(২) কালের পরিক্রমায় একটি ভাষা স্থানিক ও কালিক বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে বহুরূপী হয়ে ওঠে। যেমন— ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশ থেকে সারা পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মতো ভাষা ছড়িয়ে পড়েছে। ইফতি পিয়া ভাবতে থাকে।
১. আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায় হয়তো মানুষ নয়— হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে; হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল-ছায়ায়;
২. মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই । এই সূর্য করে এই পুষ্পিত কাননে জীবন্ত হৃদয়-মাঝে যদি স্থান পাই!
গাজীপুর চৌরাস্তার কাছে মতিন মিয়ার ছোট্ট এক চায়ের দোকান। আর দোকানের পাশেই 'ক' হাউজিং সোসাইটির বিশালাকার অ্যাপার্টমেন্ট গড়ে উঠেছে। একদিন সকালে মতিন দেখে, তার দোকান অ্যাপার্টমেন্টের সীমানা প্রাচীরের মধ্যে আটকে গেছে। সে বুঝে গেল আর কিছুই করার নেই। উপায়ান্তর না দেখে সে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ফ্লাক্সে করে চা বিক্রি করে সংসার চালায় আর উদাস দৃষ্টিতে গগনচুম্বি অট্টালিকাগুলোর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
১. ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনি পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।'
2. ‘নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো
যুগ-জনমের বন্ধু আমার আঁধার ঘরের আলো।
সবাই মোরে ছাড়তে পারে বন্ধু যারা আছে
নিন্দুক সে ছায়ার মতো থাকবে পাছে পাছে।
নিন্দুক সে বেঁচে থাকুক বিশ্বহিতের তরে,
আমার আশা পূর্ণ হবে তাহার কৃপা ভরে।’
প্রচণ্ড বন্যায় ডুবে যায় টাঙ্গাইলের ব্যাপক অঞ্চল। অনেকেরই ঘর-বাড়ি ডুবে যায়। নিরাশ্রয় হয়ে পড়ে অগণিত মানুষ। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এমনি একটা পরিবার নৌকায় চড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে। তীব্র স্রোতের টানে নৌকাটি উল্টে গেলে সবাই সাঁতার কেটে উঠে এলেও জলে ডুবে যায় একটি শিশু। বড় মিয়া নামের এক যুবক এ দৃশ্য দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে উদ্ধার করেন শিশুটিকে। কূলে উঠে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ডাক্তার এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানালেন বড় মিয়া আর বেঁচে নেই।
নারীদের প্রেরণাদায়ক একটি নাম আনোয়ারা। একজন নারী হয়ে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচন- সংক্রান্ত কাজ করেছেন। সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো বিশাল কর্মযজ্ঞ তিনি কৃতিত্বের সাথে সমাপ্ত করেছেন। রিটার্নিং অফিসার হিসেবে তিনি অন্য পুরুষ সহকর্মীদের কাছ থেকে যথাযথ সাহায্য- সহযোগিতা পেয়েছেন। নারী বলে কোথাও তাকে সমস্যায় পড়তে হয় নি।
জনৈক সমালোচকের মতে— ব্রিটিশ ভারতে বঙ্গীয় মুসলমান নারীসমাজ ছিল অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় বিধি-নিষেধের নিগড়ে আবদ্ধ। নিরক্ষরতা, অশিক্ষা ও সামাজিক ভেদ-বুদ্ধিও ছিল তাদের জন্য নিয়তির মতো সত্য। অবরুদ্ধ জীবন-যাপনে অভ্যস্ত এক অসহায় জীবে তারা পরিণত হয়েছিলেন। এদেরকে আলোর জগতে আনার জন্য রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর বক্তব্য— “আমরা সমাজেরই অর্ধাঙ্গ। আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কীভাবে ? কোন এক পা বাধিয়া রাখিলে সে খোঁড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষের স্বার্থ এবং আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে— একই।'
পল্লির সন্তান অমিত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চশিক্ষার্থে ফ্রান্স যায়। সেখানকার সুপ্রশস্ত রাজপথ, উদ্যান, নির্মল প্রকৃতি তার খুব ভালো লাগে। রাস্তাঘাট, রেলস্টেশন, বাস-স্টপেজ সব জায়গায় দেশি-বিদেশি স্মরণীয় ব্যক্তিবর্গের মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে ফরাসিদের দেশপ্রেম দেখে সে বিস্মিত হয়। ওদের ক্যাফে, মিউজিয়াম সবকিছুই তাকে আকৃষ্ট করে। উচ্চশিক্ষা শেষ করে অমিত স্থায়িভাবে সেখানে থেকে যায়। তার অতীত স্মৃতি ফরাসি সৌন্দর্যের মোহে ক্রমশ ধূসর হয়ে যায়।
নিশু, লিজা, শ্যামা, মিথিয়া, পিয়া বড়দের দৃষ্টি এড়িয়ে সাগরদিঘি পাড়ে মিলিত হয়েছে। বাড়ি থেকে চাল, ডাল, ডিম, মসলা- সবকিছু নিয়ে এসেছে। জমিয়ে পিকনিক হবে। রান্নার ধূম লেগেছে। রান্না শেষ হতেই নিশুর দেখাদেখি সবাই দিঘির জলে ঝাঁপিয়ে পড়ল। দাপাদাপি যেন শেষ হতেই চায় না। শেষে পিয়ার চেঁচামেচিতে সবাই এসে কলাপাতায় পাত পেড়ে খেতে বসল। খাবার মুখে দিয়েই এ ওর মুখের দিকে তাকাচ্ছে। নুন—নুন দেয়া হয় নি যে। আবার এক দফা হেসে নিয়ে সবাই গপাগপ খিচুড়ি খেতে বসে গেল। খুউব ক্ষুধা পেয়েছে যে!
দোয়েল পাখি বাসা বেঁধেছে জবা গাছে। সোহেল তার নতুন ঘর তোলার জন্য আঙ্গিনার অন্যান্য গাছের সাথে জবা গাছও কেটে ফেলে। দোয়েলের চোখে-মুখে বাসা হারানোর বেদনা। দোয়েল আর গান গায় না। ফুলের সাথে খেলা করে না। অন্যদিকে নিলয় তার বাড়ির আঙ্গিনার খালি জায়গায় ফুল, ফল ও অন্যান্য গাছ লাগায় । গাছগুলোকে সে নিজের মতো ভালোবাসে। তার বাগান দেখে সকলের চোখ জুড়ায়। পাখিরা তার বাগানে চলে আসে। তারা গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়। বিভিন্ন ফলের গাছ থেকে খাদ্য জোগাড় করে, ফুলের সাথে খেলা করে, গান গায়। দিনের শেষে নিশ্চিন্ত মনে বাসায় ফিরে ঘুমায়। নিলয়কে দেখে অনেকেই গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ হয়৷
সিডরের খবর শুনে মিথিয়ার ভীষণ মন খারাপ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ ঘর-বাড়ি হারা, খাবার নেই । কী ভীষণ বিপন্ন মানুষ। অথচ এর জন্য মানুষই অনেকটা দায়ী। মানুষ গাছ কেটে বন উজাড় করছে। ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। এসব দেখে মিথিয়া অনুভব করে একটা কিছু করবে। সে তার বন্ধুদের নিয়ে বাড়ির খালি আঙ্গিনায়, ছাদে গাছ লাগানোর জন্য মানুষকে সচেতন করে তোলে। তাছাড়া গাছ কেটে বন উজাড় করার বিরুদ্ধে সে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সে ভাবে এই সুন্দর বনই অনেক বেশি ক্ষতির হাত থেকে আমাদের বাঁচিয়েছে। মিথিয়া স্বপ্ন দেখে ফুলে-ফলে ভরা সতেজ-সবুজ প্রকৃতির।
নাদিম সাহেব দামি গাড়ি হাঁকিয়ে অফিসে যাবার পথে রাস্তার সিগন্যালে অপেক্ষা করেন। জীর্ণ-শীর্ণ এক ভিক্ষুক তাঁর গাড়ির জানালার পাশে ভিক্ষার থালা বাড়িয়ে দিলে তিনি জানালার কালো গ্লাস তুলে দেন। আর ভীষণ বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ভিক্ষুকে দেশটা ভরে গেছে। কথা শুনে ড্রাইভার মহসীন বলে— স্যার, গরিব মানুষ, কী করবে বলেন? এই ভিক্ষার আয় রোজগার দিয়েই তো ওরা সংসার চালায়।